নক্ষত্র কী?


আমরা সবাই কমবেশি অল্প হলেও নক্ষত্র সম্পর্কে জানি কেননা, দিনের হলুদাভ আলো এবং রৌদ্রতেজের উৎস হিসেবে জেনেছি সূর্যকে, যা সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে ভাবনার রসদ জুগিয়েছিলো কাজেই সুপরিচিত একটি নক্ষত্র বলা-ই যায়। এরপর জেনেছি, এর রয়েছে শক্তি যেমন: আলো এবং তাপ, তৈরী করবার ক্ষমতা। আর আমরা এর সংজ্ঞা থেকেও জেনে এসেছি- নক্ষত্র মাত্রই নিজস্ব আলো তৈরী করতে সক্ষম। এছাড়া রাতের আকাশে নিকষ আঁধার ফুঁড়ে ঝিকিমিকি ক'রে প্রজ্বলিত অসীম সংখ্যক আলোক বিন্দুকেও আমরা "তারা" তথা নক্ষত্র হিসেবে জানি, যা গুণে শেষ করা ক্লান্তিকর এবং পারতপক্ষে অসম্ভবও বটে। খালি চোখে দেখা তো একেবারেই নয় এমনকি হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (HST) দিয়েও এর সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা এখন অবধি সম্ভব নয়। তবে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে রাতের আকাশ ছাওয়া জ্বলজ্বলে দেখতে প্রায় একইরকম এই সাদা আলোকছটা ছড়ানো বিন্দুগুলো এবং সূর্যই কি কেবলমাত্র নক্ষত্র নাকি মহাবিশ্বে এর বৈচিত্র‍্যের আরও অভিনব স্বাক্ষর রয়েই গেছে? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ! তাহলে শুরুতেই জানতে হচ্ছে, নক্ষত্রের সংজ্ঞা।


★ নক্ষত্র কী?

নক্ষত্র হচ্ছে একটি সুবিশাল ক্ষেত্রবিশিষ্ট উজ্জ্বল গ্যাসপিন্ড যার মাঝে প্রতিমুহূর্ত বিস্ফোরণ চলতে থাকে। এজন্যে একে হাইড্রোজেন বমের সঙ্গেও তুলনা করা হয়।


★ নক্ষত্র কী দিয়ে তৈরী?  

নক্ষত্র গ্যাস দিয়ে ভর্তি একটি জ্যোতিষ্ক যেখানে মূলত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাস থাকে। নক্ষত্রের কোরে সহজ ভাষায় বললে নক্ষত্রের মধ্যখানে প্রতিমুহূর্ত চলতে থাকে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া যেখানে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো অবিরত একে অপরের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে হিলিয়াম গ্যাস এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন করতে থাকে। এই শক্তি কোর থেকে রশ্মি নির্গতকরণ অর্থ্যাৎ, রেডিয়েশনের মাধ্যমে তলের বাইরের দিকে বের হতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যাবলী সব নক্ষত্রের জন্য প্রযোজ্য হলেও, প্রত্যেকটা নক্ষত্রের রয়েছে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন: তাপমাত্রা, ঔজ্জ্বল্য, ভর, ব্যাসার্ধ, আয়ু প্রভৃতি।


★ নক্ষত্রের প্রকারভেদ কী কী?

নক্ষত্রকে এর রেডিয়েশন টাইপ বা নির্গমিত শক্তির ধরন দিয়ে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়। যদিও এরা সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ অর্থ্যাৎ সব রঙের আলো নির্গমিত করে থাকে তবুও নির্দিষ্ট নক্ষত্রের তলের তাপমাত্রার নির্দেশক হিসেবে ঐ নক্ষত্র দ্বারা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নির্গত আলো তথা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের হিসেবটাই রাখা হয়।


তাপমাত্রার অধঃক্রম অনুসারে নক্ষত্রগুলোকে সাজানো হলে শ্রেণিবিন্যাস হচ্ছে:-


 ১. Blue (O-Type)

 ২. Blue-White (B-Type)

 ৩. White (A-Type)

 ৪. Yellow-White (F-Type)

 ৫. Yellow (G-Type)

 ৬. Orange (K-Type)

 ৭. Red (M-Type)

 

এখানে, সবচেয়ে উষ্ণ তলবিশিষ্ট নক্ষত্র হচ্ছে O-Type নক্ষত্র এবং তুলনামূলক সবচেয়ে শীতল তলবিশিষ্ট নক্ষত্র হচ্ছে M-Type নক্ষত্র। এদের মধ্যে O-Type নক্ষত্রের আকার সবচেয়ে বড়ো হওয়ায় এদেরকে Blue Giants বলা হয় এবং M-Type নক্ষত্রের আকার সবচেয়ে ক্ষুত্র হওয়ায় এদের বলা হয় Red Giants.

তাপমাত্রা ছাড়াও নক্ষত্রকে শ্রেণিবিভক্ত করার আরও সুবিধাজনক বিকল্প রয়েছে।


★ এখন, মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে তারার উৎপত্তি আছে তাহলে মৃত্যু কি নেই?


 অবশ্যই আছে! তবে নিরাশ হবার কিছুই নেই, এই মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে তারার সংখ্যাও অগুনতি! তাদের মৃত্যু হয় কিন্তু এর ভেতরে পদার্থের পরিমাণ এতোই বেশি থাকে যে বিক্রিয়া ক'রে শেষ হতে হতে লেগে যায় কয়েকশ' কোটি বছর!

Comments

Archive

Contact Form

Send