নাক্ষত্রিক বিবর্তন (Stellar Evolution)
নাক্ষত্রিক বিবর্তন
একটি নক্ষত্র প্রধান ধারার তারা ( Main sequence star) হবার পর কীভাবে বিকশিত হয় তা নির্ধারণের প্রাথমিক উপাদান হল নক্ষত্রের ভর। নীচে একটি নিম্ন-ভর এবং একটি উচ্চ-ভর নক্ষত্রের বিবর্তনকে চিহ্নিত করে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হল।
নক্ষত্রের জীবনকাল:
ইন্টারস্টেলার ঘন আণবিক গ্যাসের মেঘের ( Interstellar clouds of dust) মহাকর্ষীয় পতনের (gravitational collapse) মধ্য দিয়ে তারা জন্মগ্রহণ করে।ইন্টারস্টেলার ক্লাউড এর প্রাথমিক উপাদান হলো হাইড্রোজেন।যখন আণবিক গ্যাসের মেঘের মহাকর্ষীয় পতন হয়,তখন ছোট একটি অঞ্চলে মেঘগুলো খণ্ডিত হয় এবং মহাকর্ষীয় বলের কারণে মেঘের কণাগুলো ধীরে ধীরে সংকোচিত হয়ে নক্ষত্রের কোর ( Stellar core) গঠন করে।এই নবজাতক নক্ষত্রকে বলা হয় প্রটোস্টার ( Protostar) । প্রোটস্টারের ঘূর্ণন গতি অনেক বেশি। যেহেতু তারা অনেক ঘন তাদের তাপমাত্রা অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায় যার ফলে প্রটোস্টারের কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার ফিউশন শুরু হয়। এই পর্যায়ে নক্ষত্রের কোরে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে হাইড্রোজেন, হেলিয়ামে রূপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে প্রধান ধরার নক্ষত্রের খাতায় নাম লেখে। জীবনকালের প্রায় ৯০% সময় একটি নক্ষত্র প্রধান ধরার তারা হিসাবে থাকে। একপর্যয়ে সকল হাইড্রোজেন, ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়াম হয়ে যায় এবং কোরে শক্তি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং কোর সংকোচিত হতে শুরু করে মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে। সংকোচনের করণে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং নিষ্ক্রিয় হিলিয়াম কোরের বাইরে অবশিষ্ট হাইড্রোজেনের স্তরের ফিউশন বিক্রিয়ার আবার শুরু হয়। নক্ষত্রের বাইরের স্তর ফিউশন বিক্রিয়ার কারণে খুব দ্রুত প্রসার করে অন্য দিকে কোর সংকোচিত হতে থাকে এবং তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বাইরের স্তরের বিপুল প্রসারণ এর কারণে নক্ষত্র বিশাল রূপ ধারণ করে।তবে পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বেড়ে যাবার কারণে তাপমাত্রা কমে যায় এবং নক্ষত্রের পৃষ্ঠ থেকে নির্গত বিকিরণ লালচে দেখায়।এই বিশাল লাল নক্ষত্রকে রক্তিম দৈত্য (red giant) বলে।
অবশেষে, কোরটির তাপমাত্রা এত বেড়ে যায় যে,হিলিয়ামকে ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বনে পরিতনো করতে শুরু করে।যদি নক্ষত্রের ভর ২.২ সৌর ভরের (solar mass) থেকে কম হয় তাহলে হিলিয়াম কোর ফ্ল্যাশ পদ্ধতিতে পুরো কোর হটাৎ করে জ্বলে ওঠে।একই সময় নক্ষত্রের কোরের হাইড্রোজেন এর আবরণ পুড়তে থাকে।একবার সমস্ত হিলিয়াম কর্বনে রূপান্তরিত হয়ে গেলে কোর পুনরায় সংকোচিত হতে শুরু করে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যার ফলে কোরের ঠিক উপরে অবস্থিত হিলিয়ামের আবরণ কে জ্বলিত করে যা আবার হাইড্রোজেনের জ্বলন্ত আবরণ দ্বারা বেষ্টিত। এরপর যা হবে তা নক্ষত্রের ভরের ওপর নির্ভর করে।
৮ সৌর ভরের থেকে কম ভরের নক্ষত্র :
কার্বন কোরের ( Carbon core) সংকোচনের অবিরত থাকে কিন্তু কার্বন ফিউশন এর জন্য পর্যাপ্ত তাপমাত্রায় কখনো পৌঁছায় না। তবে দুইটি জ্বলন্ত আবরণ থাকায় নক্ষত্রটি তাপীয় অস্থিতিশীল পর্যায়ে চলে যায়। কোর সংকোচিত হতে থাকে যতক্ষণ না ইলেকট্রন ডিজেনারেসি প্রেসার ( Electron degeneracy pressure) দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয এবং কোরটি শ্বেত বামনে ( White dwarf) পরিণত হয়।থার্মাল পালসের ( Thermal pulse) কারণে নক্ষত্রের বাইরের অংশ প্রসারিত হতে থাকবে এবং একটা পর্যায় প্লানেটারি নেবুলা ( Planetary nebula) আকারে নক্ষত্র থেকে নির্গত হয়ে যাবে।
৮ সৌর ভরের থেকে বেশী ভরের নক্ষত্র :
যদি কোরের ভর ৩ সৌর ভরের থেকে কম হয় তাহলে কোরের পতন নিউট্রন দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে থেমে যাবে এবং একটু নিউট্রন তারাতে ( Neutron star ) পরিণত হবে। হঠাৎ সঙ্কোচনে বাধা পাওয়ায় একটি শোক ওয়েভ তৈরি হয় যেটা নক্ষত্র কোরের বাইরে অংশ বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেয়। এই ঘটনাকে সুপারনোভা ( Supernova ) বিষ্ফোরণ বলে।
যদি কোরের ভর ৩ সৌর ভরের থেকে বেশি হয় তাহলে নিউট্রনের বাধা নক্ষত্রের মহাকর্ষণকে প্রতিরোধ করতে যথেষ্ট নয় তাই এটি নিজে মহাকর্ষণ বলে পতিত হতে থাকবে এবং কৃষ্ণ গহ্বরে ( Black hole ) পরিণত হবে।
Comments